আজ রবিবার, ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আড়াইহাজারে ‘মোড়া’ তৈরী করে সাবলম্বি ২০০ পরিবার

আড়াইহাজার প্রতিনিধি:- বাঁশ ও বেতের তৈরী “মোড়া” এর সাথে পরিচিতি নেই বাংলাদেশে এমন লোক খুব কম ই আছে। যে বাড়ীতে চেয়ার টেবিল নেই সে বাড়ীতে মোড়ার কদর অনেক বেশী। কাঠের পিঁড়ির চল উঠে যাওয়ায় মেহমানদের বসার জন্য গ্রামবাংলায় মোড়া ই বসার আসন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর এই বাাঁশ ও বেতের মোড়া তৈরী করে সাবলম্বী হয়েছে আড়াইহাজারের পাশাপাশি ৩টি গ্রামের ২০০ পরিবার। মোড়া তৈরী করে বিক্রি করাই তাদের একমাত্র পেশা।

বাড়ীর উঠোনে গাছের ছায়ায় বসে নিরিবিলি পরিবেশে বাঁশের শলাকা কাটছিলেন গোপাল। উঠোনের আরেক পাশে সেই শলাকা চেছে ছিলে মসৃণ করছিলেন আরেকজন। অনতি দূরে বসে বাঁশের শলাকা গোল করে মুড়ি দিয়ে গাথার কাজ করছিলেন একজন ষাটোর্ধ মহিলা। তাঁর নাম অঞ্জলী রানী। এভাবেই কয়েক হাত ঘুরে তৈরী হয় একেকটি ‘মোড়া’। গ্রামবাংলার চিরাচরিত ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেতের তৈরী মোড়া। শহর জীবনেও ‘মোড়া’র ব্যবহার চোখে পড়ে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে। যাদের ঘরে খাট-সোফার উপস্থিতি নেই, তাদের ঘরে মেহমান এলেই এগিয়ে দেয়া হয় ‘মোড়া’।

‘মোড়া’য় বসেও বেশ আরাম। চেয়ারের চেয়ে ‘মোড়া’য় গাঁট হয়ে বসে থাকা যায়। আমাদের গ্রামেও ‘মোড়া’র ব্যবহার চোখে পড়ে। রতœগর্দি গ্রামের বাসিন্দা তপন চন্দ্র দাসজানান, ”আমরা গ্রামের মানুষ। মাটিতে বা চৌকিতে ঘুমাই। ইদানিং অনেকে খাট কিনেন। তবে চেয়ার টেবিল আমাদের নেই। অতিথি এলে আজো আমরা ‘মোড়া’ এগিয়ে দেই।’  তিনি জানান, আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার তিনটি গ্রামে ‘মোড়া’ তৈরী করে জীবীকা নির্বাহ করে প্রায় ২০০ পরিবার। গ্রাম তিনটি হল, রামচন্দ্রদী, জালাকান্দি ও রতœগর্দি। তিনটি গ্রামই স্থানীয়ভাবে ‘্ধসঢ়;ঋষিপাড়া’ হিসেবে পরিচিত। এখানকার তৈরী ‘মোড়া’র বেশ চাহিদা রয়েছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ অন্যান্য এলাকায়। প্রতি সপ্তাহেই বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এখানে এসে ‘মোড়া’ নিয়ে যায়।

সরেজমিনে রতœগর্দি গ্রামে ঋষিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বাড়ীতে ‘মোড়া’ তৈরীতে ব্যস্ত রয়েছেন কারিগরেরা। কথা হয় এই গ্রামের একজন প্রবীণ কারিগর অঞ্জলী রানীর সাথে। বয়সের কোটা ষাট পেরিয়ে যাচ্ছে। এখনো তিনি দিব্যি ‘মোড়া’ তৈরী করতে পারেন নিঁখুতভাবে। ‘মোড়া’ তৈরীর সময় কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, তাদের পরিবারের সকলেই ‘মোড়া’ তৈরী করেন। এটাই পারিবারিক পেশা। তাঁর ৩ ছেলে ও দশ বছর ধরে এই কাজ করেন। একজন কারিগর দিনে সর্বোচ্চ ৩ টি ‘মোড়া’ তৈরী করতে পারে। একেকটি ‘মোড়া’র পাইকারী মূল্য ১০০ টাকা। পাইকাররা বিক্রি করেন ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। সারা বছরই ঋষিপাড়ায় ‘মোড়া’ তৈরী করা হয়।

সর্বশেষ সংবাদ